
নাহিদ-
সহ. সম্পাদক মাধ্যম২৪.কম
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর ৫৪তম মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ আন্দোলন আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে স্থান পায় একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, ৩০ লাখ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়ে ঊঠেছিলো বাংলার তীর্থভূমি। শত শত সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ ও হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে বিজয় নিশান ওঠে বাঙলার বুকে। ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বাঙালি জাতি পায় লাল-সবুজের পতাকা।
আত্মদানকারী সেইসব বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালি জাতি। জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে লাল-সবুজের আভায়। আগামীকাল বীর সন্তাদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে নামবে হাজারো মানুষের ঢল। তাই ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রাঙ্গণকে করা হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। রং তুলির আঁচড় ও বাহারি ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধনকারী গাছে আভায় তৈরি করা হয়েছে লাল-সবুজের পতাকা। মেঝেতে রং তুলির আঁচড়ে করে তুলা হয়েছে পরিপাটি। বিভিন্ন ফুলগাছি ছড়াছে মনোমুগ্ধকর সুবাস। এছাড়া লেক সংস্কার ও স্মৃতিসৌধের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত ধুয়ে-মুছে করা হয়ে পরিষ্কার। স্মৃতির মিনারের শহীদ বেদী শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে পরিচ্ছন্নকর্মীরা গণমাধ্যমের কর্মীদের বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘ দিন ধরে স্মৃতিসৌধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ করি। বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কাজ করে, শহীদদের জন্য কাজ করতে পেরে অনেক ভালো লাগে ।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান গণমাধ্যমের কর্মীদের জানান, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামন্ডলী, বিদেশি কূটনীতিকসহ লাখ লাখ জনতা বীর শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপরে সর্ব সাধারণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সেজন্য গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, লেক সংস্কার, সীমানা প্রাচীর মেরামতসহ সব কাজ সম্পূর্ণ করেছি। বর্তমানে জাতীয় স্মৃতিসৌধ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকলেও জাতীয় স্মৃতিসৌধের ১০৮ একর জায়গাজুড়েই জোরদার করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থান। ইতোমধ্যেই সৌধ প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপরিচালক (ডিআইজি) একেএম আওলাদ হোসেন।
তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশেপাশে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শুধু সৌধ এলাকা নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর মেট্রো নিরাপত্তার বলয়ে চলে আসবে। প্রায় ২৩ কিলোমিটার মহাসড়কে তিন হাজারের পুলিশের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় করা হয়েছে। ১১টি সেক্টরে কাজ করছে পুলিশ। সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে বিজয় দিবস ঘিরে কোনো ধরনের ঝুঁকি বা হুমকি নেই।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১০৮ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই সৌধে প্রতি বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবদেন করেন।
1 Comment