রাশি ফল

কেমন কাটবে অথবা কেমন কাটাবেন এই সপ্তাহ

স্যার আর্থার চার্লস ক্লার্ক (বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক , বিজ্ঞান লেখক,  উদ্ভাবক, সমুদ্রের তলদেশে অনুসন্ধানকারী)

বলেছেন –

‘জ্যোতিষশাস্ত্রে আমার কোনো বিশ্বাস নেই। তবে হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে আমি ধনু রাশির জাতক। আসলে আমরা মানুষরা বরাবরই সন্দেহপ্রবণ’।

এ কথার বিপরীতে অনেক কথাই আছে, তবে আমরা একটা বিষয় পরিস্কার করে বলতে চাই- মানুষ নিজেই তাঁর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে অনেকাংশ, বাকি অংশ ভাগ্য বলতে দোষের কিছু নেই…

প্রিয় মেষ, কেন নিজেকে প্রেসার কুকার ভাবছেন! প্রকৃতি আমাদেরকে যেমন দিয়েছে কর্মময় জীবন, তেমনি উজার করে দিয়েছে  নিজের সৌন্দর্যতা!

পথের পাশে শিশির ভেজা ঘাসের উপর সুর্যের মিহি আলো যখন পরে, তখন ঘাসগুলো মুক্তোর মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে- এই দৃশ্য দেখেছেন কখনো?

ভোরের পবিত্র আলোয় আপানার ঘুম কেটে যাক, আর হ্যাঁ, এই সপ্তাহ শুধু নয় – কোনদিনই নিজেকে প্রেসার কুকার ভাবার প্রয়োজন নেই। সময়ের কাজ সময়েই করুন, নিশ্চিন্তে থাকুন।        

বেশ কয়েক বছর আগে একটা ছবি দেখেছিলাম,

“একটি লোককে জীবন্ত সিদ্ধ করে মারা হচ্ছে আর হাত দিয়ে একটি শিশুকে তিনি শূণ্যে তুলে ধরে আছেন,যেনো শিশুটিকে গরম পানি স্পর্শ করতে না পারে”

পেইন্টিং টি তৈরি করেছিলেন জাপানি চিত্রশিল্পী ‘টোয়োকুনি ইচিওসাই’। আমি ছবি দেখে শুধু ভাবনায় এসেছিলো সন্তানের প্রতি পিতার ভালোবাসা। 

        কয়েক মাস পরে হঠাৎ করে একদিন জানতে পারলাম- দূর্ভাগ্যবশত এটি শুধুমাত্র একটি ছবি নয়, ছবিটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা কে কেন্দ্র করে অঙ্কিত। ছবির এই ব্যাক্তির নাম ইশকাওয়া গোয়েমন। তিনি জন্মেছিলেন ১৬ শতকে, জাপানিজ বাবাদের কাছে তিনি একজন আদর্শ পিতা। তাকে জাপানের ইতিহাসের রবিনহুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে ধনীদের অতিরিক্ত অর্থ লুট করে গরীবদের মাঝে ভাগ করে দিতো।

        জাপানের সেনগোকু আমলের যুদ্ধবাজ সম্রাট টয়োটমি হিদেয়োশিয়া কে হত্যা করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। শুধু ব্যর্থই হননি, তিনি সম্রাটের পেয়াদাদের হাতে ধরা পরে যান। সম্রাট কে হামলার চেষ্টা করায় তৎক্ষনাৎ তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়। তার মৃত্যুদন্ডাদেশ ছিল একদম আলাদা ও ভয়ানক। তাকে ফুটন্ত তরলে সিদ্ধ করে মৃত্যু আদেশ দেয়া হয়।

        শুধু তাকেই মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়ে সম্রাট ক্ষান্ত হননি। তিনি ইশিকাওয়া গোয়েমন এর নবজাত ছেলে সন্তানকে একসাথে সিদ্ধ করার আদেশ দেন।

মৃত্যুর জন্য বাবা ও ছেলে দুজনকে বড় করাইয়ের তরলে বসানো হয়। এরপর কড়াইয়ের তলায় আগুন দিয়ে তাপ দেয়া শুরু করে। ছেলেকে বাঁচাতে ইশিকাওয়া গোয়েমন হাত দিয়ে উপরে তুলে রাখেন যেনো গরম তরল তার ছেলের শরীর স্পর্শ করতে না পারে। দীর্ঘক্ষণ সহ্য করার পর আর ছেলেকে তুলে ধরে রাখতে পারে নি ইশিকাওয়া গোয়েমন। বাবা ও ছেলে দু’জনেরই মৃত্যু হয়।

        ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম শাস্তি হিসাবে এই ঘটনা স্থান পায়। প্রিয়মেষ, আজ আপনাকে কিছু বলতে পারছি না। ক্ষমা করবেন।

মিথুনের জন্য –

“যে জীবনে ভালোবাসা পায়, সে আর কিছু পায় না। যে জীবনে আর সব কিছু পায়, সে ভালোবাসা পায় না।”

উপন্যাস: মেমসাহেব

~ নিমাই ভট্টাচার্য

মেমসাহেব উপন্যাস পড়েছেন? কিছু-কিছু বইয়ে বুদ হয়ে থাকা যায়, আবার থাকাটা দায়!

প্রিয় মিথুন, সপ্তাহ যেমনি কাটুক, আমার শুভ কামনা আপনার সাথে…   

নার্সিসিস্ট শব্দটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। যারা নিজেদের অধিক ভালোবাসেন বা আত্মপ্রেমিক তাদের নার্সিসিস্ট বলে। সকল নামের পেছনে যেমন কোন উৎস বা ঘটনা থাকে ঠিক তেমনি এই নামের পেছনেও রয়েছে তেমনই একটি ঘটনা। নার্সিসিস্ট শব্দটি  গ্রিক মিথলজির উল্লেখযোগ্য চরিত্র নার্সিসাস থেকে নেয়া । এই নার্সিসাস নিজের শারীরিক রূপ ও সৌন্দর্যে এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে, তার এই আত্মপ্রেম নিজের সমাপ্তি ডেকে এনেছিল।

নার্সিসাসের জন্ম হয়েছিল গ্রীক মিথলজির নদীর দেবতা সেফিসাসের ঘরে। নার্সিসাস এতটাই সুন্দর ছিল যে তার মায়ের মনে হল – তার এই পুত্র সন্তান তার অন্য সন্তানদের চেয়ে অধিক সুন্দর। কোন মানুষের মধ্যে তিনি এর আগে এত সৌন্দর্য দেখেননি। আর তাই নিজের শিশুসন্তান নার্সিসাসের ভবিষ্যৎ জানতে অন্ধ ভবিষ্যৎ বক্তা টাইরেসিয়াসের শরণাপন্ন হলেন।

নার্সিসাসের মা টাইরেসিয়াস এর কাছে জানতে চাইলেন, কি আছে আমার এই সন্তানের ভাগ্যে?
কতদিন সে বাঁচবে?

অন্ধ টাইরেসিয়ায় প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “যতদিন সে নিজেকে চিনতে না পারবে।”

মানুষ যখন নিজেকে চিনতে পারে আসলেই কি তার মৃত্যু হয়ে যায়? লোভ-লালসা, আত্ম-অহংকার মরে গেলে কথিক মানুষের মৃত্যু হয়, মূলতঃ আসল মানুষটা জেগে ওঠে তখন।

প্রিয় কর্কট, আপনাকে আমার সবটুকু দিয়ে দিলে যদি আপনার পরিবর্তন হয় আমি দিতে রাজি! কেন জানি না মনে হয়- আপনি নিতে নারাজ! ভালো থাকুন প্রিয়জন আমার।  

অনেকের অভিযোগ  উনাদের মন মত কথা আমি বলতে পারি না। এইটা সত্যি যে, আমি যা বলতে চাই, বলতে গেলে আমাকে আপনারা আর মেনে নিতে পারবেন না। এই কারণে বলি না- আবার বলতে চাইও না!

        সকল সত্য মেনে নেয়া যেমন কঠিন তেমনি বলাটাও কঠিন। প্রিয় সিংহ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” উপন্যাসে একটা কথা আমি প্রায়ই বলি-

“মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া, এই দুইয়ের তফাৎ আছে।”

আজ প্রাণখুলে গল্প করতে ইচ্ছা করছে। অথচ কেউ কাছে নেই! –এমন সময় আপনার না আসুক।

কাছে আসার গল্প বলে যেমন সুখ আসে। তেমনি দূরে যাবার গল্পে কষ্ট থাকে, থাকে চোখের জল।

বাবা-মা বেঁচে থাকলে বেহেস্ত কিনে নিতে পারেন দুনিয়াতেই। বিশ্বাস রাখুন আমার কথায়- প্রিয় কন্যা। সামনে যে দুর্বিষহ সময় আসছে খুব কাছের মানুষদের কাছেই থাকুন।

তুলাকে আমি বলি রোমান্টিকের বাপ-মা! বাজারে যা যা রটানো আছে তুলা সম্পর্কে –সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে তুলা আমার কাছে একদিকে যেমন বীর তেমনি রোমান্টিক!

বেশ কিছুদিন আগে এক কাছের বন্ধু ফোন দিয়ে জানতে চাইলো,

  • দোস্ত, আমার রাশি কি হতে পারে?

আমি জানি আমার বন্ধু তুলা রাশির। জানাই নাই ওকে! নিজের রাশি ফল দেখে অন্যেরটা আর পড়বে না। এটা ভেবে চুপ থেকেছি। খুব হেসে শুধু জানিয়েছি – তুই সকল রাশির সেরা রাশির মানুষ! জানি না আজ ও পড়বে কি না! পড়লেই জেনে যাবে। জানুক, সাথে এটাও জানুক-

“অন্যকে পড়তে পারাটা একটা আর্ট!”

জেনে খুশি হবেন- তুলারা অন্যকে পড়তে পারদর্শী! অথচ নিজের প্রতি যত্নবান না থাকায় কতজন কত কিছু যে হারিয়েছে…  

“যাহাকে ভালোবাসি সে যদি ভালো না বাসে, এমনকি ঘৃণাও করে তাও বোধ করি সহ্য হয়! কিন্তু যাহার ভালবাসা পাইয়াছি বলিয়া বিশ্বাস করেছি, সেইখানে ভুল ভাঙ্গিয়া যাওয়াটাই সবচেয়ে নিদারুন। পূর্বের টা ব্যাথা দেয়। কিন্তু শেষের টা ব্যাথাও দেয়, অপমান ও করে।”

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চরিত্রহীন)   

মাই ডিয়ার বৃশ্চিক, আমি আপনাকে এরচেয়ে সহজ কথা বলতে পারি না! টানা কয়েক সপ্তাহ আপনার খারাপ সময়ের বিপরীতে আপনি যে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছেন এইটা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমার মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিন- ফর গড সেক!

এই যে আপনার সম্পর্কে বলার জন্য কলম ধরেছি, সাথে কি করছি জানেন!?

মেহেদি হাসানের গজল শুনছি আর ভাবছি- এতো সুন্দর সুর কেমনে পাইছে এরা! আর যিনি লিখছে এই বিচ্ছেদ বাণী, আত্ম বাণী তার কথা ভেবে ভেবে নিজেকে তুচ্ছ লাগে।

        এমন নানান কারণে আমার নিজেকে তুচ্ছ লাগে। প্রিয় ধনু, আমার মত সব কিছুতে নিজেকে তুচ্ছ ভাববেন না দয়া করে। আপনাকে দিয়ে যা হবে আমাকে দিয়ে সেটা হবে না জেনেই আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা!    

“ আমার জীবনকে সহজ করে নিয়েছি  কিছুটা এমন ভাবে,  

কারো কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি , আবার কাউকে ক্ষমা করে দিয়েছি!”

  • মির্জা গালিব

প্রিয় মকর, জীবনকে সহজ করে নিতে মির্জা গালিবকে পড়ুন।  

মাই ডিয়ার কুম্ভ! কবিতা অনেক শক্তিশালী ব্যপার। ভাবছেন, কেন বললাম এই কথা? কবিতায় জীবনবোধ খুঁজে পায় এমন মানুষের কষ্ট কম। এরা সহজেই কবিতার মধ্যে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে কষ্টগুলো ভাসিয়ে দেয়।

এই সপ্তাহ আপনার জন্য কবিতামাখা হোক- এমনটা আমি চাই।   

মীন রাশি (১৯ ফেব্রুয়ারি—২০ মার্চ)

প্রেমকে গোপন ভাবতে আমি নারাজ। প্রেম থাকবে প্রকাশ্য ! তবে “মারিফাত” বলে অন্য কথা,  

মারিফাত বলে- “ফানা ফিল্লাহ” হয়ে যেতে, সেটাও গোপনে।   

প্রিয় মীন,

জীবনের বাঁকে বাঁকে যে স্বপ্নের গল্পে আপনি মেতেছেন এই কথা আমি জেনে গেছি ভেবে লজ্জা পাইয়েন না। বরং আপনার স্বপ্নে আপনি বিভোর থাকেন – একদিন দেখবেন “স্বপ্ন কেমনে সত্যি হয়” এই গল্প আপনি লিখছেন, আর আমি  সেটা পড়ছি।

আমার অনেক কাছের মানুষ মীন রাশির! তাদেরকে নিরাশ কর‍তে আমার ভালো লাগবে না- এইটা ভেবে আমি উপরের কথা বলি নাই, নিশ্চিত থাকেন। “ফানা ফিল্লাহ” হয়ে যিনি মারিফাতে বিলীন হয়ে যান, তিনি পরাজিত হতে পারেন এমন কথা কোন জ্যোতিষ যদি বলতে পারেন আমি তার গোলামী করবো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।