ঢাকার সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটিতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নামে মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় ও মারধরের অভিযোগে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক লিখিত এজাহার দেওয়ার পর সাভার মডেল থানা পুলিশ মামলা দুটি রেকর্ড করে।
এর মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মীর আকতার হোসেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে মামলা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফতাব উদ্দিন আহমেদ খান।
বিশ্ববিদ্যালয় দুটির পক্ষ থেকে করা মামলা দুটির কপিতে দেখা যায়,
সিটি ইউনিভার্সিটির করা মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখসহ বিশ্ববিদ্যালয়টির এক হাজার শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা ও প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহ বেআইনিভাবে সমবেত হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটিতে প্রবেশ করে যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগসহ পেট্রোল বোমা ও হাত বোমার ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখার অফিসকক্ষে ভাঙচুর, দামি জিনিসপত্র লুটপাট এবং ১৫ টাকা চুরির অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বলেও উল্লেখ করেছেন বাদী।
অন্যদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে করা মামলায় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ব্যাচেলর প্যারাডাইসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, শিক্ষার্থীদের আহত করাসহ হামলার পর ১১ জনকে জিম্মি করে সারা রাত আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন, মারধর এবং মনস্তাত্ত্বিক ভয় দেখিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিয়া।
ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আসাদুজ্জামান বলেন, দুটি মামলা হয়েছে। সিটি ইউনিভার্সিটির মামলার বাদী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। এজাহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাত এক হাজারের অধিক ছাত্রকে আসামি করা হয়েছে। আর ড্যাফোডিলের মামলায় এজাহারনামীয় অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এ সংঘাতের ঘটনা তদন্তে ও ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য দেখতে সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশন।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের করা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, এটা কেন ঘটলো তদন্ত করতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা সীমাবদ্ধ থাকবো। আইনি বিষয় রাষ্ট্রের আইনে পরিচালিত হবে। গতকাল ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি হয়েছে, আজকে আমরা প্রথম পরিদর্শন করছি। এখানে কি কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটি পরিদর্শন করে গেলাম। আমরা উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে লিখিত আকারে বক্তব্য চাইবো, তাদের বক্তব্য পাওয়া সাপেক্ষে এবং আশপাশের যে সিসিটিভি আছে, সেগুলোর ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা সাপেক্ষে একটা তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের কাছে আমরা প্রস্তাব করবো। দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হবে সেটি। পুনরায় যাতে দ্রুত ক্যাম্পাসের কার্যক্রম চালু হয়, সেটিও আমরা দেখবো।
