লাইফস্টাইল

হেলথ টিপস-৬: মৌমাছি, ভিমরুল, বোলতা বা পোকায় কামড়ানো এবং চুনের ব্যবহার


🐝 মৌমাছি, ভিমরুল, বোলতা বা পোকায় কামড়ানোর পর চুন দিলে কী হয়- বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

মৌমাছি, ভিমরুল, বোলতা বা পোকায় কামড়ালে শরীরে যে বিষ (venom) ঢোকে তা সাধারণত অম্লীয় বা অ্যাসিডিক (acidic) হয়। চুন হলো ক্ষারীয় বা অ্যালকালাইন (alkaline) পদার্থ। তাই কামড়ানোর পর চুন দিলে তা ওই অম্লীয় বিষকে আংশিকভাবে প্রশমন বা নিউট্রালাইজ করতে পারে। এর ফলে, কামড়ানোর জায়গার জ্বালা ও ব্যথা কিছুটা কমতে পারে।

🐝 মৌমাছি, ভিমরুল ও পোকার বিষের উপাদান: মৌমাছি, ভিমরুল, বোলতা- সবই হাইমেনোপটেরা (Hymenoptera) শ্রেণির পোকা, ফলে এদের বিষকে হাইমেনোপটেরা বিষ (Hymenoptera venom) বলা হয়।

বিষের প্রধান উপাদানগুলো হলো:
১. মেলিটিন (Melittin): মৌমাছির বিষের সবচেয়ে বেশি অংশ (প্রায় ৫০%)। এটি কোষের ঝিল্লি ভেঙে ব্যথা ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
২. ফসফোলাইপেজ এ-টু (Phospholipase A₂): কোষ ধ্বংস করে, প্রদাহ ও অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া বাড়ায়।
৩. হায়ালুরোনাইডেজ (Hyaluronidase): বিষ দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে দেয়।
৪. হিসটামিন (Histamine) ও অন্যান্য অ্যামাইনস (amines): লালচে ফোলা, চুলকানি ও অ্যালার্জির জন্য দায়ী।
৫. অ্যাপামিন (Apamin): স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, ব্যথা বাড়ায়।

🐝 কতটা ক্ষতিকর?
👍 সাধারণ ক্ষেত্রে:
📌 কামড়ানোর জায়গা ফুলে যায়, ব্যথা করে, চুলকায় (Local reaction)।
📌 কয়েক ঘণ্টা বা ১–২ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তেমন কোনো ক্ষতি হয় না।

👍 সংবেদনশীল ক্ষেত্রে:
📌 শরীরে অতিরিক্ত অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (Allergic reaction) হয়, যাকে anaphylaxis বলে।
📌 লক্ষণ: শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ হঠাৎ পড়ে যাওয়া, চামড়ায় ফুসকুড়ি, মাথা ঘোরা।
📌 এটা জরুরি অবস্থা, তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিতে হয়।

👍 একসাথে অনেকগুলো মৌমাছি বা ভিমরুল কামড়ানোর ক্ষেত্রে:
📌 বেশি পরিমাণ মেলিটিন (Melittin), ফসফোলাইপেজ (phospholipase) ইত্যাদি শরীরে গেলে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া (Toxic reaction) হতে পারে। সেক্ষেত্রে-
– রক্তকণিকা ভেঙে যেতে পারে।
– কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
– শক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

👉 সুতরাং, একটা/দুটো মৌমাছি, ভিমরুল, বোলতার কামড় সাধারণত প্রাণঘাতী হয় না, শুধু ব্যথা ও ফোলা হয়। কিন্তু যাদের খুব বেশি অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি অসুবিধা হতে পারে। একসাথে বহু কামড় খেলে তা কখনো-কখনো বিপজ্জনক হতে পারে।

🍚 চুন লাগানোর ক্ষেত্রে সতর্কতা:
♨️ চুন খুবই ক্ষারীয়, ফলে বেশি পরিমাণে ঘন চুন লাগালে ত্বক পুড়ে যেতে পারে (chemical burn) এবং ফোসকা ও ঘায়ের সৃষ্টি করতে পারে।
♨️ অনেক সময় কামড়ানো জায়গা চুলকাতে গিয়ে চুনের কারণে ত্বক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে সংক্রমণ (infection) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
♨️ প্রয়োজনে খুব অল্প পরিমাণে, শুধু কামড়ানোর স্থানে সাময়িকভাবে পাতলা কোরে চুন দেওয়া যেতে পারে। চারপাশে ছড়িয়ে ঘন চুন ব্যবহার করা উচিত নয়।
♨️ দীর্ঘ সময় রেখে দিলে ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
♨️ বারবার চুলকানো বা ঘষা থেকে বিরত থাকতে হবে।

👍 যা করা ভালো
🐜 যদি হুল আটকে থাকে, সাবধানে সরাতে হবে। চিমটা বা নখ দিয়ে ঘষে সহজে বের করা যায়।
🚿 আক্রান্ত জায়গা সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
🚿 ঠাণ্ডা পানি বা বরফের প্রলেপ দিলে ফোলা ও ব্যথা কমে।
✍️ অ্যালার্জি ও ব্যথা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন ও ব্যথা প্রশমনের ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।

📚 রেফারেন্স:
1. Lee G, Bae H. Bee Venom Therapy: Potential Mechanisms and Therapeutic Applications. Toxins (Basel). 2016;8(12):326. doi:10.3390/toxins8120326

2. Chen J, Lariviere WR. The nociceptive and anti-nociceptive effects of bee venom injection and therapy: A double-edged sword. Prog Neurobiol. 2010;92(2):151-183.

3. Pucca MB, et al. Bee venom: From venomous biochemistry to therapeutic applications. J Ethnopharmacol. 2019;233:90-102.

4. Wehbe R, et al. Bee Venom: Overview of Main Compounds and Bioactivities for Therapeutic Interests. Molecules. 2019;24(16):2997.

✍️
অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান,
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডায়াবেটোলজিস্ট। চর্ম ও যৌনরোগ এবং মেডিসিনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।