“ফর্সা কেন হতে হবে? ফর্সা সুন্দরের অংশ নয়। সৌন্দর্য ত্বকে। ত্বক সুন্দর রাখুন”
গ্লুটাথিয়ন কী?
গ্লুটাথিয়ন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের লিভার প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি করে। এটি শরীরের টক্সিন কমাতে ও কোষকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
গ্লুটাথিয়ন ইঞ্জেকশনে ফর্সা হবার দাবী সত্য নয়:
গ্লুটাথিয়ন শরীরের মেলানিন বা ত্বকের রঞ্জক তৈরির প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
মেলানিন দুই ধরনের-
১. ইউ-মেলানিন (Eumelanin): কালো-বাদামি রঙ।
২. ফিও-মেলানিন (Pheomelanin): হালকা বা লালচে রঙ।
গ্লুটাথিয়ন Eumelanin কমিয়ে সাময়িকভাবে Pheomelanin বাড়িয়ে দেয়। ফলে, ত্বক সাময়িকভাবে কিছুদিনের জন্য হালকা ফর্সা দেখাতে পারে। কিন্তু শরীরের প্রাকৃতিক জেনেটিক রঙের প্রোগ্রাম অপরিবর্তিত থাকে। ইনজেকশন বন্ধ করলে মেলানিন আবার স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হয় এবং আগের রঙ ফিরে আসে।
গ্লুটাথিয়ন মানুষের ত্বক ফর্সা করার জন্য কার্যকর- এমন শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং US FDA- এ পদ্ধতিকে অনুমোদন দেয়নি।
গ্লুটাথিয়ন ইঞ্জেকশন কেন বিপজ্জনক?
👺 লিভার ও কিডনির ক্ষতি করে: অতিরিক্ত গ্লুটাথিয়ন শরীরে গেলে তা লিভার ও কিডনির মেটাবলিজমে চাপ দেয়। ফলে, লিভার এনজাইম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভার সিরোসিস ও কিডনি ফেইলিওর এর ঝুঁকি থাকে।
👺 রক্তে ক্ষতিকর কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন করে: উচ্চ ডোজ গ্লুটাথিয়ন রক্তে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। এতে কোষের ভেতরের প্রোটিন ও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ভবিষ্যতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
👺 শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা ট্রিগার করে: শিরায় বা ইন্ট্রাভেনাস গ্লুটাথিয়ন সালফার কম্পাউন্ড তৈরি করে, যা ফুসফুসে ইরিটেশন ঘটায়। এতে অ্যাজমার রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
👺 মারাত্মক অ্যালার্জি হতে পারে: স্বল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যালার্জি বা অ্যানাফাইল্যাক্সিস রিয়্যাকশন দেখা যায়, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
👺 শরীরের রোগপ্রতিরোধক ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়: গ্লুটাথিয়ন ইমিউন কোষেরর স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
👺 বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছাড়া বিউটি পার্লারে গ্লুটাথিয়নের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, সঠিক ডোজ না মানা, জীবাণুমুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ না করার মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। এতে রক্তবাহিত সংক্রমণ, যেমন- হেপাটাইটিস বি/সি, এইচআইভি পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
নিরাপদ বিকল্প:
👍 পরিমিত ও পর্যাপ্ত ঘুম
👍 প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান
👍 সবুজ শাকসবজি, ভিটামিন C ও E সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
👍 প্রয়োজনে সানস্ক্রিন ব্যবহার
👍নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম
📚 রেফারেন্স:
1. World Health Organization (WHO). Glutathione as a skin whitening agent: Potential health risks. Geneva, 2019.
2. Watanabe F, et al. “Potential adverse effects of intravenous glutathione for skin lightening.” Clin Toxicol. 2018;56(5):360–366.
3. US Food and Drug Administration (FDA). Safety communication on unapproved injectable skin lightening agents. 2018.
4. D. Handog, R. Datuin, I. Singzon. “An updated review of the use of glutathione as a skin-lightening agent.” Int J Dermatol. 2016;55(5):477–484.
5. Handog EB, et al. Glutathione and melanin: A review on skin lightening effects. Int J Dermatol. 2016;55(5):477–484.
6. Watanabe F, et al. Potential toxic effects of glutathione as skin-whitening agent. Clin Toxicol. 2018;56(5):360–366.
অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান,
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডায়াবেটোলজিস্ট। চর্ম ও যৌনরোগ এবং মেডিসিনে উচ্চতর প্রশিক্ষণ।
৩০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। ২৬টি বইয়ের লেখক এবং গবেষক। PubMed, ResearchGate-এর মতো বিখ্যাত রিসার্চ ওয়েবসাইটে অনেক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত।
চেম্বার:
১. রবি ও বুধ: মেডিকেয়ায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, বোয়ালমারী, ফরিদপুর। ফোন- ০১৯৭৪২৩৩৮২২।
২. সোম ও বৃহস্পতি: আহমেদ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পিংকির মোড় চৌরাস্তা, কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ। ফোন- ০১৯১১৪৪৩৪০৪, ০১৭১৪৫৬৩১১৯।