প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোয় বেড়েছে সেই চালের সরবরাহ। এতে স্থানীয় বাজারে গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে সবজির বাজারে আগুন, দাম কমেনি শাক সবজির।
রাজধানীর মানিকনগর, রামপুরা, বাসাবো সহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাল আমদানির অনুমোদন গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দেওয়া শুরু হলেও বাজারে সরবরাহ বেড়েছে গত এক সপ্তাহে। এতে দেশি চালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। ফলে সরু, মোটা, মাঝারি—সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি ১-৪ টাকা কমেছে। বাজারে আমদানি চালের সরবরাহ থাকলে আগামী আমন মৌসুম পর্যন্ত দাম আর বাড়বে না বলে আশা করছেন তাঁরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোয় পাটের বস্তায় দেশি চালের সঙ্গে আমদানি করা প্লাস্টিকের বস্তাও রয়েছে। আমদানি করা এসব চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্না ও মিনিকেট, দেশের ব্রি-২৮-এর সমজাতের চাল।
বাজারগুলোতে গতকাল বৃহস্পতিবার মানভেদে সরু চাল নাজিরশাইল বিক্রি হয়েছে ৭৬-৮২ টাকা কেজি, এক সপ্তাহ আগে এই মানের চালের দাম ছিল কেজি ৮০-৮৬ টাকা। মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭৪-৭৯ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৭৬-৮২ টাকা। মাঝারি মানের ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯-৬১ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৬১-৬৪ টাকা। পাইজামের দাম এখন ৫৯-৬০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬১-৬২ টাকা। এ ছাড়া কাজল লতা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়, যার দাম সপ্তাহখানেক আগে কেজিপ্রতি ১-২ টাকা বেশি ছিল। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা ও গুটি বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৪ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৫৪-৫৬ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, গত বোরো মৌসুম শেষে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তাই সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের ইমপোর্ট পারমিশন (আইপি) দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এরপর আমদানিপ্রক্রিয়া শেষে ২০ আগস্টের পর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়।
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত ২১ আগস্ট থেকে আড়াই হাজার টনের বেশি চাল আমদানি হয়েছে বলে আমদানিকারকেরা জানিয়েছেন। বেনাপোলের আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানি কিছুটা বেড়েছে। ফলে বাজারে দামও কমেছে। এভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আরও দাম কমবে।
জানা যায়, আগামী আমন মৌসুমের আগপর্যন্ত বাজার স্থির রাখাতে বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) জারির জন্য লিখিত অনুরোধ জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারিভাবে আরও ৪ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্নভাবে ভর্তুকিমূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা।
এদিকে আমদানির ঘোষণায় বাজারে বাড়তি দামে স্থির রয়েছে ডিম, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের মূল্য। এসব পণ্যের দাম সপ্তাহ দুয়েক আগে বাড়তে শুরু করেছিল। এ ছাড়া স্থির রয়েছে মুরগি, মাছ, মাংস, আটা-ময়দা, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের সপ্তাহের দামেই। সবজির দামের উর্ধগতি অবশ্য কমেনি । সবজির দাম চলতি সপ্তাহে বাড়া শুরু করছিলো, কয়েকটি সবজির দাম কমলেও বেশির ভাগ সবজির দাম বেড়েই চলেছে। ১০০ থেকে ১২০ টাকা প্রায় সব সবজির দাম। যা মধ্যবিত্তের নাগালের বাহিরে।
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, গতকাল ফার্মের ব্রয়লার জাতের মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৮৫ টাকা কেজি, ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা ডজন, যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ১৫০ টাকায় উঠেছিল। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৮০০ টাকা কেজি।
বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭৫-১৮০ টাকা কেজি। আলুর দাম আগের মতোই ২৫-৩০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করে বাণিজ্য সচিবকে এক চিঠিতে বলেছে, পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা ও ডিমের ডজন ১৫০ টাকা হলেই আমদানির অনুমোদন দিতে হবে।
