নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির সরকারি বাসভবন বালুওয়াতারে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
মন্ত্রিসভায় উপস্থিত এক মন্ত্রী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, কাঠমান্ডুতে ১৭ জন ও ইতাহারিতে ২ জনসহ মোট ১৯ জন নিহত এবং চার শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর লেখক নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেন। নিহতদের বেশির ভাগই ছিলেন সোমবারের তরুণ বিক্ষোভকারীদের অংশ।
এর আগে দিনভর দলীয় বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক গগন থাপা ও বিশ্বপ্রকাশ শর্মা। কংগ্রেস সভাপতি শের বাহাদুর দেউবা নীরব থাকলেও লেখক বৈঠকেই নিজের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান এবং পরে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে পেশ করেন।
রমেশ লেখক গত বছর ১৫ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
যুবসমাজের নেতৃত্বে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ধীরে ধীরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্নীতি ও জবাবদিহির অভাবের বিরুদ্ধে এই আন্দোলন সোমবার আরও তীব্র আকার নেয়। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে পুলিশ গুলি চালালে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।
সামরিক বাহিনীকে নামানো হয়েছে রাজধানীতে। বিক্ষুব্ধ তরুণ-তরুণীরা কারফিউ ভেঙে পার্লামেন্ট এলাকার সুরক্ষিত অঞ্চলে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জলকামান, টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় কিছু বিক্ষোভকারী সংসদ ভবন চত্বরে প্রবেশ করতেও সক্ষম হয়।
কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসক ছাবিলাল রিজাল জানান, নতুন নির্দেশনায় বিকাল ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর থাকবে। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির বাসভবনসহ উচ্চ নিরাপত্তার বিভিন্ন এলাকা চলাচল ও সমাবেশের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
স্থানীয় টেলিভিশন সাংবাদিক শ্যাম শ্রেষ্ঠা কাঠমান্ডুর বানেশ্বর এলাকায় বিক্ষোভ কাভার করতে গিয়ে রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নিজ এলাকা দামাকে আরেক ব্যক্তি আহত হন। পোখরায়ও কারফিউ জারি করা হয়েছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ওলি জরুরি মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকেন।

কেন বিক্ষোভ
গত শুক্রবার থেকে নেপালে ফেসবুক, ইউটিউব, এক্সসহ ২৬টি অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাটের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তরুণ-তরুণীরা।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সরকারের পদক্ষেপ মূলত বাকস্বাধীনতা দমনের প্রচেষ্টা। দুর্নীতি ও রাজনৈতিক পরিবারের প্রভাবশালীদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ভিডিও টিকটকে ভাইরাল হওয়ায় ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
২৪ বছর বয়সী ছাত্র যুবরাজ ভাণ্ডারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধই একমাত্র কারণ নয়, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি, যা নেপালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী ইক্ষামা তুমরোক বলেছেন, আমরা স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে। পরিবর্তন চাই, এ প্রজন্মেই সেটি ঘটতে হবে।
সরকারের ব্যাখ্যা
গত মাসে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয়, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সাত দিনের মধ্যে নেপালে নিবন্ধিত হয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই এ সিদ্ধান্ত আসে।
সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সম্মান করে এবং এর সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চলমান সংকট নিরসনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই প্রত্যাহার করা হতে পারে।
নেপালে এর আগেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। ২০২৩ সালে অনলাইন জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে টেলিগ্রাম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়। আর টিকটক নয় মাস নিষিদ্ধ থাকার পর গত বছর স্থানীয় নিয়ম মেনে নিলে তা পুনরায় চালুর অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী ওলি এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে দেশজুড়ে বিক্ষোভের বিস্তার এবং সরকারের ওপর চাপ বাড়ায় নেপালি রাজনীতিতে অচলাবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
সূত্র: এনডিটিভি ও কাঠমান্ডু পোস্ট
