লাইফস্টাইল

সবাই নিষেধ করেন, তারপরও মাংস তো খেতেই হবে

সমগ্র পৃথিবীর মানুষ জানেন, মানুষের শরীরের জন্যলাল মাংস ভালো নয়। অথচ মাংসখেতেই হবে! বিশেষ করে কোরবানির ঈদে। নিজেদের জবাই করা গরুর মাংস, আত্মীয়স্বজনের পাঠানো মাংস, মাংস না খেলে কি চলে? কিন্তু জানতে হবে, কতটুকু খেলে ক্ষতি কম হবে! কারণ,এই মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে ভালোমন্দ দুটোইআছে।

ঈদের সময় মাংস লোভনীয়ই বটে। বাঙ্গালী মুসলমানের ঘরে অন্তত পাঁচ-সাত দিন বিরামহীনভাবে  চলে মাংসভোজন । নিজের বাড়িতে প্রতিবেলা যেমন মাংস খাওয়ার ধুম, তেমনি কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গেলেও খাবারে অবধারিতভাবে মাংস থাকে। সে সাথে থাকে মাংসেরই নানান পদকাবাব, কোর্মা, কারি কত কী!

মাইক্রোবায়োম এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুর বিশাল সংগ্রহ, যা প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরে, বিশেষ করে অন্ত্রে বাস করে। সাম্প্রতিক সময়ের গবেষণায় দেখা যায় যে, অন্ত্রের এসব জীবাণু কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তা শুধু হজমের ক্ষেত্রেই নয়, বরং ইমিউন সিস্টেমের প্রতিরক্ষা, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের স্বাস্থ্যের জন্য।

অন্ত্রে একটি শৃঙ্খলা আছে। অতিরিক্ত লাল মাংস তাতে ব্যাঘাত ঘটিয়ে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। গবেষকেরা দেখেছেন যে E. timonensis প্রবর্তন TMAO মাত্রা এবং রক্তের জমাট বাঁধার প্রবণতা বাড়ায়। মাংসের অতিভোজনে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা ডায়রিয়া হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণও বেড়ে যায়। এসব ছাড়া আরও বড় বড় রোগের সূত্রপাত ঘটতে পারে। ঈদের সময় সাধারণত গরু, মহিষ, খাসিসহ বিভিন্ন ধরনের লাল মাংসই বেশি খাওয়া হয়।

গরুর মাংস খাওয়ার ঝুঁকি
  • হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
  • পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কোলন, প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি হয়।
  • নানা ধরনের রোগে ফুসফুসে সমস্যা হতে পারে।
  • আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • পিত্তথলিতে পাথর, পেপটিক আলসারসহ কিডনির জটিলতা হতে পারে।
গরুর মাংস খাওয়ার ভালো দিক

গরুর মাংস আয়রনের একটি চমৎকার উৎস। গরুর মাংসে থাকা আয়রন আপনার শরীরকে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে। এই প্রোটিন আপনার রক্তকে ফুসফুস থেকে শরীরের বাকি অংশে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ না করা আপনাকে আয়রনের অভাবজনিত রক্তাল্পতার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যার অর্থ আপনার শরীর যথেষ্ট অক্সিজেন পাচ্ছে না। আপনি ক্লান্ত, দুর্বল এবং মানসিকভাবে কুয়াশাচ্ছন্ন বোধ করতে পারেন। ঝুঁকিপূর্ণ লোকেদের আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তাল্পতা প্রতিরোধে গরুর মাংস সাহায্য করতে পারে।

গরুর মাংস আপনার খাদ্যের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হতে পারে, তবে তা পরিমিত গ্রহণে। মাংস খাওয়ার সঙ্গে অবশ্যই সালাদ খেতে হবে আর ভাতরুটি এড়িয়ে চলতে হবে। মাংস খাওয়ার আদর্শ পরিমাপ হলো, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম। অর্থাৎ আপনার ওজন যদি ৭০ কেজি হয়, তাহলে ৭০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন অর্থাৎ দুই টুকরা।

গরুর মাংস জিংকের একটি ভালো উৎস, যা শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু নিরাময় করতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করার জন্য প্রয়োজন। শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিংক প্রয়োজন।প্রোটিন আপনার পেশি তৈরি করতে সাহায্য করে। আপনি যদি খেলাধুলা করেন, তাহলে পেশির বৃদ্ধি ও সুস্থতায় বিশেষ সহায়ক হয় এই মাংস। দৈনিক যে পরিমাণ প্রোটিন প্রয়োজন, গরুর মাংস তা সরবরাহ করে। পেশির ভর হারানো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। পেশির ভর হারানোর ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন এবং আপনার ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে উঠতে পারে; বিশেষ করে যদি আপনার বয়স ৫৫ বা তার বেশি হয়।

গরুর মাংস আপনার খাদ্যের একটি স্বাস্থ্যকর অংশ হতে পারে, তবে তা পরিমিত গ্রহণে। মাংস খাওয়ার সঙ্গে অবশ্যই সালাদ খেতে হবে আর ভাতরুটি এড়িয়ে চলতে হবে। মাংস খাওয়ার আদর্শ পরিমাপ হলো, শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম। অর্থাৎ আপনার ওজন যদি ৭০ কেজি হয়, তাহলে ৭০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন অর্থাৎ দুই টুকরা।

সালাদের সঙ্গে মাংস খেলে পেটে গ্যাস হবে না, পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।

চর্বি বাদ দিয়ে অল্প তেলে, উচ্চ তাপে রান্না করুন।

লেবুর রস, টক দই, ভিনেগার, পেঁপে প্রভৃতি মাংসকে নরম করে, যা হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই রান্নার সময় এগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

রাতে মাংস না খাওয়াই ভালো।

ঐতিহ্যগতভাবে স্যাচুরেটেড ফ্যাট গরুর মাংসেই বেশি পাওয়া যায়। স্যাচুরেটেড ফ্যাট খারাপ এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে, যা কার্ডিওভাসকুলার রোগে অবদান রাখে। সামগ্রিকভাবে, বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণগুলো নির্দেশ করে যে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি মাংস খেলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি ১৮% বেড়ে যায়।

গরুর মাংস প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টির একটি ভালো উৎস হলেও অন্যদিকে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। এ জন্য গরুর মাংস খাওয়ায় সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। পরিমিত খেলে উপকার হবে। নচেৎ বাড়বে সমস্যা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।