রাজনীতি

জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকার ৬৭১ নেতার পদত্যাগ, পরে গণপদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন  জাপা’র   

জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ জানিয়ে একযোগে পদত্যাগ করেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরের ১০টি থানার ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে এই গণপদত্যাগ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগরের হাতিরঝিল থানা, শেরেবাংলা নগর থানা, মোহাম্মদপুর থানা, আদাবর থানা, পল্লবী থানা, মিরপুর থানা, বাড্ডা থানা, রূপনগর থানা, দারুস সালাম থানা ও ক্যান্টনমেন্ট থানা শাখা জাতীয় পার্টির ৬৭১ জন অংশ নেন। এসময় এসব থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখেন। এসব থানার মোট ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছেন বলে জানান দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন পূর্বাপর জাতীয় পার্টির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত আছেন। জাতীয় পার্টিতে বর্তমানে যিনি চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত আছেন-সেই জিএম কাদের এক বছর আগে থেকেই বলে আসছেন, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। সেইভাবে তিনি বক্তৃতা বিবৃতি এবং মিডিয়ায় কথা বলে এসেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা বলে নিজেকে বিরোধী নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টাও করেছেন। আমরাও তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে আমরা বুঝতে পারলাম, তিনি গোপনে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নিজের স্বার্থরক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত পার্টির চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব ৩০০ আসন থেকে প্রার্থী মনোনীত করার পর মাত্র ২৬টি আসনে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় পাওয়ার বিনিময়ে গোটা পার্টিকেই বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে। আর সমঝোতা করে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ মাত্র ১১ জন প্রার্থী নির্বাচনে এমপি হয়ে এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, এমতাবস্থায় জাতীয় পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতা ও কর্মী সমর্থকরা চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। পার্টির তৃণমূল পর্যায় থেকে পার্টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবার জন্য চেয়ারম্যান এবং মহাসচিবের পদত্যাগের দাবি ওঠে। পার্টির এই দুরবস্থার মধ্যেও চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাচারিতার নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করে পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতাদের একের পর এক অব্যাহতি দিয়ে চলেছেন। 

তিনি পল্লীবন্ধু এরশাদের নাম নিশানা মুছে দেয়ার হীন চক্রান্ত করে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যান জি এম কাদের পার্টির নেতা কর্মীদের প্রতিবাদের ভাষা বুঝতে না পেরে প্রতিহিংসাবশত পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের সংগ্রামী আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়াও কয়েকজন নেতাকে মৌখিক ভাবে অব্যাহতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

জাহাঙ্গীর আলম পাঠান আরও বলেন, আপনারা জানেন সারা দেশে করোনা মহামারির সময় আমাদের ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক সফিকুল ইসলাম সেন্টুর নেতৃত্ব ঢাকা মহানগরের ২৫টি থানা ও ৫৪টি ওয়ার্ড সম্মেলন সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। আর সেই ত্যাগী নেতাকে কোনোরকম কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান না করে সরাসরি অব্যাহতি দিয়েছেন। যাহা শিষ্টাচার বহির্ভূত। এমতাবস্থায় আমরা এরশাদ প্রেমিক নেতাকর্মীরা জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন তার বিপর্যস্ত সংগঠনে অবস্থান করে প্রাণপ্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই আমরা জি এম কাদেরের সংগঠন থেকে আজ গণ পদত্যাগের ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে আপনাদের কাছে এই অঙ্গীকারও করে রাখছি-অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা পল্লীবন্ধু-এরশাদের চেতনা প্রেরণা ও নীতি আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকব। সত্যের পথে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত, ইনশাল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, জাপার চেয়ারম্যান ও মহাসচিব এটাকে নিজের দল মনে করেন। তারা এটাকে মুদি দোকান মনে করে। তারা সকালবেলা অফিসে আসেন, সন্ধ্যায় ফিরে যান। এখানেই খাওয়া-দাওয়া করেন।

জাপার চেয়ারম্যান একটি ফাঁদ তৈরি করেছেন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, তিনি (জিএম কাদের) কিছু নির্ধারিত লোক তৈরি করেছেন। তারা সারাদিন দোকানদারি করেন। সন্ধ্যার পর তাকে (জিএম কাদের) হিসেব দেন। হিসাব নিয়ে তিনি বাসায় চলে যান। তার আশপাশে যারা আছেন, তারা হলো ঘুঘুর ফাঁদ। এই ফাঁদে তিনি পড়ে গেছেন। এই ফাঁদ থেকে তিনি বের হতে পারবেন না। উনি জানেন না, উনি এখন লাট্টুর মতো ঘুরছেন। আর এই লাট্টুর সুতা মহাসচিবের হাতে।

জাপাকে জি এম কাদের ধ্বংস করে ফেলেছেন অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, এই দল করার যোগ্যতা আপনার নেই। আপনার পদত্যাগ দাবি করি। আমরা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল করবো না। আমরা পল্লীবন্ধু এরশাদের ঝান্ডা, আদর্শ নিয়ে আগামীতে এগোব।

এই গণপদত্যাগ অব্যাহত থাকবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহীন আরা সুলতানা রিমা, বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরীসহ কয়েকশ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,  আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, কয়েকটি গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে “ জাতীয় পার্টি থেকে ৬৭১ জন পদত্যাগ করেছে”। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে ঐ সভায় কতজন উপস্থিত ছিলেন ? যারা উপস্থিত ছিলেন তারা সবাই কী জাতীয় পার্টির সদস্য ? তাছাড়া, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা কী ৬৭১ জনের কোন তালিকা প্রকাশ করেছে?

প্রকৃত সত্য হলো বেশিরভাগ নেতাকর্মী চেয়ারম্যানের প্রতি আনুগত্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বনানীস্থ কার্যালয়ে নব গঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ একটি সভাও করেছেন। তথ্য উপাত্ত যাচাই করে করে রিপোর্ট করতে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।