লাইফস্টাইল

অতিরিক্ত চিন্তা করা রুখতে, গড়ে তুলুন ৭ টি দৈনন্দিন অভ্যাস

নেতিবাচক চিন্তার অন্তহীন ভিতরে আটকে আছেন? আপনি একা নন, তরুণদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ এবং উদ্বেগের সমস্যাগুলির সাথে, অতিরিক্ত চিন্তা করা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা আধুনিক সময়ে মানুষের উত্পাদনশীলতা এবং সুখের অংশকে প্রভাবিত করে।  বিরক্তিকর চিন্তাভাবনা নিয়ে, অতিরিক্ত চিন্তা করা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হতে পারে যা কেবল সময়ের অপচয়ই নয় বরং সামগ্রিক মঙ্গলকেও নষ্ট করে দিতে পারে।

 অতিরিক্ত চিন্তা কাটিয়ে ওঠা ততটা কঠিন নয় যতটা কেউ মনে করছেন। আপনার যা দরকার তা হল আপনার চিন্তাগুলিকে একটি ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাওয়া।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, “অতিরিক্ত চিন্তা করা একটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত অভ্যাস যা আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেয়, উদ্বেগ পোষণ করে এবং আমাদের সামগ্রিক সুস্থতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এটি উদ্বেগ এবং বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও একটি সাধারণ কারণ এবং কার্যকরভাবে ‘সমস্যা-সমাধান’ করার আমাদের ক্ষমতাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে। তবে সুসংবাদটি হল যে, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এটি খুব ভালভাবে কাটিয়ে উঠতে পারা যায়, যা আমাদের চিন্তাভাবনাগুলিকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে সহায়তা করে,”  

চেষ্টা করেই দেখুনঃ

এক.  আপনার চিন্তার ধরণ শনাক্ত করে লিখে রাখুন…  

এটি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া, আপনার চিন্তার ধরন শনাক্ত করুন । মনোবিজ্ঞানীদের ভাষায়- আপনার চিন্তাভাবনাগুলি পর্যবেক্ষণ করুন এবং সেগুলিকে হিসাব কষে গ্রহণ করুন। যেমন- আপনি যখন নিজেকে অতীতের ভুলগুলি পুনরায় করছেন বা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে এমন কিছু নিয়ে চাপ নিচ্ছেন, তখন আপনি কেমন অনুভব করছেন তা পর্যবেক্ষণ করুন এবং নিজের কাছে স্বীকার করুন। তারপর, সমাধানের পথ অথবা  ট্রিগার  সনাক্ত করার চেষ্টা করুন। আপনার চিন্তাভাবনার ট্র্যাক রাখার একটি উপায় হতে পারে আপনার প্রিয় মোবাইল বা একটি নোটবুকে লেখা, সেখান থেকে ধীরে ধীরে দেখে নিন সে আপনার সে সময়ের অনুভবগুলো এবং তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন। নিজেকে বোঝান- আপনি নিজেকে কতটা ঝুকিতে রেখেছেন।  

দুই.  চিন্তার ট্রেনটিকে লাইনচ্যুত করার জন্য পন্থা অবলম্বন করুন

এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যখন আপনার মন অবাঞ্ছিত অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে তখন নিজেকে এমন একটি মানসিক পন্থা অবলম্বন করুন যেন জোর করে অতিরিক্ত চিন্তার ট্রেনটিকে লাইনচ্যুত করা যায়। নিচে কিছু পন্থা দেয়া হলো-

ক. মানসিকভাবে বা মৌখিকভাবে একটি এলোমেলো সংখ্যা বলুন চিন্তার পরিবর্তে, পরবর্তী কোন সংখ্যাটি বলতে হবে তার উপর ফোকাস করুন নিজেকে।

খ. সারাদিনের কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন এবং সেই মুহুর্তে সেই চিন্তাগুলি থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য কাজের তালিকার মধ্যে যে কোনটা একটি বেছে নিন। তবে এটি এমন কিছু হলে ভালো হয় যেমন- হাঁটাতে যাওয়া, পেইন্টিং করা, কুকুর বা বিড়ালের পরিচর্যা, বা কেবল গান শোনা।

গ. অন্য কারো জন্য ভালো কিছু করুন কারণ এটি আমাদের মধ্যেও খুশির হরমোন নিঃসরণ করে।

ঘ. গভীর পেটে শ্বাস নেওয়া: এক হাত হৃৎপিণ্ডের উপর এবং অন্যটি পেটে রেখে পেটের দিকে শ্বাস নেওয়া এবং ত্যাগ করা। এটি বর্তমান থেকে বের হতে সাহায্য করে।

৩. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন

পিউ রিসার্চ সেন্টারের ডেটা ইঙ্গিত করে যে, সংবাদ এবং তথ্যের অবিচ্ছিন্ন এক্সপোজার, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে চাপের মাত্রা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। তথ্য গ্রহণের উপর সীমানা নির্ধারণ করা তথ্য ওভারলোড প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে যা প্রায়শই অতিরিক্ত চিন্তার দিকে পরিচালিত করে। কাজেই সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন।   

৪. পদক্ষেপ নিন

আমরা প্রায়ই একটি অতিরিক্ত চিন্তার ঘোরে আটকে যাই এবং কাজ বা চিন্তার দিকে কোন পদক্ষেপ নিতে অক্ষম হয়ে যাই। ঘোর থেকে বেরিয়ে আসার একটি ভাল উপায় হল- এটির উপর ভিত্তি করে একটি পদক্ষেপ নেওয়া। চিন্তার সঠিক কারণ সংজ্ঞায়িত করে এবং সময় সীমা সহ স্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশনা নিজের মাঝে বিকাশ করতে পারলে দীর্ঘস্থায়ী অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা প্রতিরোধে সহায়তা করবে। এটি সঠিক উপায়ে আপনার শক্তি চ্যানেলে সাহায্য করে।

৫. আপনার ভয়কে বন্ধুতে পরিণত করুন

এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ যে, কিছু জিনিস সবসময় আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। আপনার ভয়কে গ্রহণ করা আপনার মানসিক সুস্থতায় উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করতে পারে। আপনি প্রায়শই উদ্বিগ্ন বিষয়গুলির মুখোমুখি হওয়ার জন্য ছোট ছোট সুযোগগুলি সন্ধান করুন৷

৭. বাড়িতে ফেরার পর নিজের কাজের জবাবদিহি নিজের কাছে করুন

রাতে ঘুমানোর আগে নিজের সারাদিনের কাজের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে সময় বরাদ্ধ করুন৷ দিনের ঘটনাগুলি আপনার অসুস্থ বা এলোমেলো চিন্তাকে কমাতে আপনাকে সক্ষম করে এবং মানসিক বিশৃঙ্খলা কমিয়ে দেয় যা অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা দূর করতে অবদান রাখে।

৭. সাহায্য চান  

একটি কথা নিজেকে বুঝিয়ে রাখুন – কখনও কখনও আমাদের কাছে সমস্ত উত্তর নাও থাকতে পারে। একজন বন্ধু, পরিবার, সহকর্মী বা এমনকি একজন পেশাদারের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া সর্বোত্তম হতে পারে। প্রায়শই আমাদের ব্যর্থতা আমাদের অনুভূতিকে আরও শক্ত করার জন্য সাহায্য চাইতে বাধা দেয়। নিজেকে বোঝান- জানি না, এটা ব্যর্থতা নয়। জানতে চাইনা এইটা ব্যর্থতা।

যেহেতু প্রাপ্তবয়স্করা আধুনিক জীবনের জটিলতাগুলিকে অন্য চোখে দেখে কাজেই অতিরিক্ত চিন্তা করা তাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ হতে পারে৷ এই অভ্যাসগুলি গ্রহণ করার মাধ্যমে, প্রাপ্তবয়স্করা তাদের চিন্তাভাবনার উপর নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে পারে, চাপ কমাতে পারে এবং একটি ইচ্ছাকৃত এবং ভারসাম্যপূর্ণ মানসিকতা গড়ে তুলতে পারে, শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত চিন্তার চক্র থেকে মুক্ত হতে পারে৷

‘দ্যা লাইফ স্টাইল’ পত্রিকা অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সাদিয়া আফরিন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।