শিক্ষা

বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোতে কোনো ‘শিক্ষক’ নাই!

ডা. নাজমুল হাসানঃ

বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের দুই ধরনের পদবি আছে- ‘সহকারী শিক্ষক’ এবং ‘প্রধান শিক্ষক’। বিদ্যালয়-প্রধানের পদবি ‘প্রধান শিক্ষক’ এবং অন্যান্য সকল শিক্ষকের পদবি ‘সহকারী শিক্ষক’। প্রাথমিক স্তরে ‘শিক্ষক’ বলে কোনো পদবি নাই।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ‘সহকারী শিক্ষক’, ৭ বছর শিক্ষকতা করার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ এবং বিদ্যালয় প্রধান হলে ‘প্রধান শিক্ষক’।

এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোতে শুধুমাত্র ‘সহকারী শিক্ষক’ আছে, বয়োঃবৃদ্ধ শিক্ষকদের ‘সিনিয়র শিক্ষক’ বলা হয় তবে এর কোনো নিয়ম-কানুন নাই। অর্থাৎ এখানে ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ‘সহকারী শিক্ষক’ হিসেবেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। কিছু কিছু স্কুল নিজেদের মতো করে কিছু পদ-পদবি সৃষ্টি করেছে তবে তা সার্বিক না। বিদ্যালয়-প্রধান হলে তাঁর পদবি হয় ‘প্রধান শিক্ষক’। অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরে‌ও ‘শিক্ষক’ বলে কোনো পদবি নাই।

‘শিক্ষক’ অর্থ যিনি শিক্ষা দেন বা পাঠদান করেন। ‘সহকারী শিক্ষক’-এর অর্থ দুটো হতে পারে- এক. শিক্ষককে সহায়তাকারী বা সাহায্যকারী এবং দুই. পূর্ণ শিক্ষক হবার পূর্বের সহকারী-স্তর।

সহকারী শিক্ষকের অর্থ যদি হয় শিক্ষককে সহায়তাকারী বা সাহায্যকারী তবে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক কারা, যাদেরকে এরা সহায়তা করছে?

অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকের অর্থ যদি হয় পূর্ণ শিক্ষক হবার পূর্বের সহকারী-স্তর তবে এই পদবি দিয়েই কেন আজীবন পাঠদান করানো হয়? তাছাড়া পূর্বের স্তর থাকা মানে পরবর্তী স্তর‌ও থাকতে হবে, সেই পরবর্তী স্তরটা কী? পরবর্তী স্তরে গিয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে পূর্ণ শিক্ষক হবার সুযোগ কেন নাই?

কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মতো প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপকের মতো স্কুল পর্যায়ে কেন সহকারী শিক্ষক, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, সহযোগী শিক্ষক বা পূর্ণ শিক্ষকের মতো পদবি নাই? অ্যাডমিন ক্যাডারেও যেমন আছে সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব এবং সিনিয়র সচিব; স্কুল শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কেন এমনটি নাই। তাহলে স্কুল শিক্ষকদের মোটিভেশনটা কোথায়? যে পদবিতে জন্ম সে পদবিতেই মৃত্যু তো কোনো মোটিভেশন হতে পারে না!

স্কুল শিক্ষকদের বেতনাদি, সুযোগ-সুবিধা, স্ট্যাটাস প্রটোকল, নিয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদির যা অবস্থা তাতে পারতপক্ষে কোনো মেধাবী মানুষ স্কুল শিক্ষক হতে চায় না। চাকরি নাই বলে মেধাবীদের মধ্যে কেউ স্কুল শিক্ষক হলে তাঁর ফ্রাস্টেশন হয় আরো বেশি। সবচেয়ে মেধাবি শিক্ষার্থীরা কেন স্কুল শিক্ষক হতে চায় না? বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা এবং তা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।

শিক্ষকদের দোষারোপ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। নতুন কারিকুলামকে তাবিজ বানিয়ে শিক্ষকদের গলায় ঝুলিয়ে রাখলে বা পড়াপানি দিয়ে গুলিয়ে খাওয়ালেও সত্যিকার অর্থে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বাস্তবায়নের জন্য অসঙ্গতি দূর করে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা জরুরি।

জাতি গঠনের কারিগরদের এমন অবস্থা করে রাখলে জাতির ভবিষ্যত আরো শোচনীয় হবে তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই।‌

আপাতত ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি থেকে ‘সহকারী’ শব্দটি মুছে শুধু ‘শিক্ষক’ পদবি রাখা হোক।

লেখকঃ কলামিস্ট এবং গবেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।