স্বাস্থ্য

অনিয়মিত পিরিয়ড ? কী করবেন

ডা. শ্রাবণী অধীকারীঃ
নির্দিষ্ট তারিখ পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি পিরিয়ড না হয় এই নিয়ে হাজার চিন্তা চলতে থাকে মেয়েদের মনে। নারীদের নিয়মিত ও সময়মতো পিরিয়ড (মাসিক) হওয়াটাই স্বাভাবিক।  অনিয়মিত পিরিয়ড বা একেবারেই পিরিয়ড বন্ধ হওয়া মূলত পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের (POS) জন্য হয়ে থাকে। তবে আরও অনেক কারণ আছে, যার জন্য পিরিয়ড নিয়মিত হয় না। এই সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।1

অনিয়মিত পিরিয়ড আসলে কী?

প্রতি মাসে হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বা পিরিয়ড বলে।

পিরিয়ড চলাকালীন পেটব্যথা, পিঠব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর যাদের এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয় না অথবা দুই মাস আবার কখনও চার মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে।  অনিয়মিত পিরিয়ড নারীদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

পিরিয়ড অনিয়মিত কেন হয়

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে, দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার পিছনে অনেক কারণ হতে পারে, আপনার যদি PCOS-এর সমস্যা থাকে বা থাইরয়েডের কোনও সমস্যা হলে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল পিছিয়ে যেতে পারে। আবার ব্রেস্টফিডিং, মেনোপজ সংক্রান্ত বিষয় হলেও পিরিয়ড পিছিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের মতে, সাধারণত প্রতি মাসে ২১-৩৫ দিনের ব্যবধানে পিরিয়ড হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে, এটি একটি হরমোন প্রক্রিয়া যা বয়ঃসন্ধির শুরু থেকে মেনোপজ পর্যন্ত চলতে থাকে। তবে আরও অনেক কারণ আছে, যার জন্য পিরিয়ড নিয়মিত হয় না। যেমন- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার গ্রহণ যেমন অতিরিক্ত কফি পান করা, স্ট্রেস নেওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করা, অপরিচ্ছন্ন থাকা, মদ্যপান বা ধূমপান করা ইত্যাদি।

টিনেজার ও মধ্যবয়সী নারীদের মধ্যে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর পেছনের কারণটি হলো হরমোন। আর লম্বা সময় স্ট্রেসে থাকলে অনেকেরই মাসিক দেরিতে হতে পারে।

ওজন কম হলে সময়মতো পিরিয়ড নাও হতে পারে। এমনকি কিছু দিন বন্ধও থাকতে পারে। জরায়ুতে টিউমার ধরনের এক ধরনের বৃদ্ধি হলো ফাইব্রয়েডস। এগুলো পিরিয়ডের স্বাভাবিক চক্রকে বাধা দিতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে অ্যামেনোরিয়া  আক্রান্ত নারীদের  সাধারণত দেরীতে পিরিয়ড হয়। অ্যামেনোরিয়া দুই প্রকার।

প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়া:

যখন প্রথমবার আপনার পিরিয়ড খুব দেরিতে শুরু হয়। যে মহিলাদের পিরিয়ডের বয়স ১৪ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। কিন্তু যদি দেরি হয় তাহলে আপনি অ্যামেনোরিয়ায় আক্রান্ত।

সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া:

যখন আপনি একটানা তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে পিরিয়ড মিস করেন।

অ্যামেনোরিয়া-র লক্ষণ কী?

  • মাথাব্যথা
  • দৃষ্টি শক্তি কম
  • বমি বমি ভাব
  • চুল পরা
  • স্তনের আকার পরিবর্তন
  • স্তন থেকে আঠার মতো তরল

প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার লক্ষণ

প্রাথমিক অ্যামেনোরিয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ইতিহাস, জেনেটিক সমস্যা এবং লাইফস্টাইল। অ্যামেনোরিয়া বা প্রাথমিক মেনোপজের পারিবারিক ইতিহাস। জেনেটিক বা ক্রোমোসোমাল ত্রুটি। এগুলো আপনার ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা এবং মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে। টার্নার সিনড্রোম একটি উদাহরণ।

সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়ার কারণ

গর্ভাবস্থা, ব্রেস্টফিড করানো এবং মেনোপজের কারণে সেকেন্ডারি অ্যামেনোরিয়া হতে পারে। অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইনজেকশন বা অন্তঃসত্ত্বা ডিভাইস। এ ধরনের জিনিস ব্যবহারে মহিলাদের পিরিয়ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চিকিৎসা

বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করার জন্য মহিলাদের রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত মাসিক হলে শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক থাকে। তবে অনিয়মিত পিরিয়ড বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এ বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

অ্যামেনোরিয়া থেকে মুক্তি পেতে কী করতে হবে?

অ্যামেনোরিয়া থেকে মুক্তি পেতে নারীদের তাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে। যেমন খাদ্য, শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক চাপ। কিছু হরমোনের ওষুধ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি পিরিয়ড শুরু করতে সাহায্য করতে পারে।

হরমোন থেরাপির মাধ্যমে আপনার হরমোন ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অস্ত্রোপচার বিরল, তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে।

ডিসক্লেইমার: এই প্রতিবেদনটি কেবলমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য, আরও বিস্তারিত জানতে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।

লেখক: গাইনি কনসালট্যান্ট, এ-ওয়ান হাসপাতাল লিমিটেড।

  1. ↩︎

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।