প্রতি বছর আগস্টের মাঝামাঝি পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি আকাশে মহাজাগতিক আলোর খেলা দেখায়, যা ধূমকেতু সুইফট-টাটল এর ধুলিকণার কারণে ঘটে। এ বছর ১২ ও ১৩ আগস্ট রাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অন্ধকার ও আলোবিহীন স্থান থেকে উজ্জ্বল উল্কা ও আগুনের গোলা দেখা যাবে, যদিও পূর্ণচাঁদের আলো কিছু ক্ষীণ উল্কা ঢেকে দেবে।
পার্সেইড উল্কাবৃষ্টি (Perseid meteor shower) পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে জনপ্রিয় উল্কাবৃষ্টি। প্রতিবছর জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের শেষ পর্যন্ত এটি সক্রিয় থাকে, তবে এর শিখর সাধারণ দেখা যায় ১২ ও ১৩ আগস্ট রাতে। ধূমকেতু সুইফট-টাটল রেখে যাওয়া ধুলিকণা ও ক্ষুদ্র পাথরের টুকরো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৯ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, ঘর্ষণে পুড়ে ঝলমলে আলোর রেখা তৈরি করে। অন্ধকার আকাশে শিখরের সময় ঘণ্টায় প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি উল্কা দেখা যেতে পারে, এর মধ্যে উজ্জ্বল আগুনের গোলাও থাকে, যা রাতের আকাশে দীর্ঘ লেজাকৃতি রেখে যায় কিছুসময়ের জন্য।
প্রতি বছর এই সময়ে রাতের আকাশ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধোঁয়াশার ওপারে রয়েছে এক বিশাল মহাজাগতিক মঞ্চ। এবারও ১২ ও ১৩ আগস্ট রাতে (৯:৩০ এর পর) বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাবে এই অসাধারণ দৃশ্য, যদি আপনি সঠিক সময়ে সঠিক জায়গা বেছে নিতে পারেন।
উল্কাবৃষ্টি ঘটার কারণ খুবই মনোমুগ্ধকর। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে করতে ধূমকেতুর রেখে যাওয়া কণার ভেতর দিয়ে যায়। এই ক্ষুদ্র কণাগুলি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় প্রচণ্ড গতিতে পুড়ে উঠে আলোর রেখা তৈরি করে, যা আমরা উল্কাবৃষ্টি হিসেবে দেখি।
দেখার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো লাইট পলিউশন বা আলো দূষণ। ঢাকার বাইরে যে কোনো খোলা মাঠ থেকে কিছু দেখা সম্ভব হলেও প্রকৃত সৌন্দর্য ধরা দেবে দেশের অন্ধকার ও শান্ত এলাকায়। কক্সবাজারের শান্ত পাহাড়ি এলাকা, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের আলোবিহীন সৈকত, বান্দরবানের রুমা বা থানচির উঁচু স্থান এবং সিলেটের লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, এসব স্থান উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য আদর্শ। যাতায়াত সম্ভব না হলে গ্রামের প্রান্তের খোলা মাঠ বা নদীর ধারে চলে যেতে পারেন।
দেখার সময় অন্ধকারে চোখ অভ্যস্ত হতে অন্তত ২০ মিনিট সময় দিন এবং এই সময় ফোন বা উজ্জ্বল আলো ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। ঘাড়ের চাপ কমানোর জন্য একটি ম্যাট বা হেলান দেওয়া চেয়ার নিয়ে যেতে পারেন। উজ্জ্বল টর্চ ব্যবহার করবেন না, কারণ সামান্য আলোও রাতের আকাশের সৌন্দর্য ম্লান করে দেয়। ধৈর্য ধরুন, কারণ উল্কাবৃষ্টি মাঝে মাঝে বিরতিও নেয়। প্রতিটি উল্কা দেখে হৈচৈ না করে নীরবে আনন্দ ভাগাভাগি করুন, যাতে অন্যরাও তাদের মুহূর্ত উপভোগ করতে পারে।
যদিও এ বছর চাঁদ প্রায় পূর্ণ থাকবে এবং অনেক ক্ষীণ উল্কা চাঁদের আলোয় মিলিয়ে যাবে, তবুও উজ্জ্বল উল্কা ও মাঝে মাঝে আগুনের গোলা সহজেই চোখে পড়বে। চাঁদের আলোর মধ্যে এগুলো খুঁজে পাওয়া যেন একটি ছোট্ট বিজয়ের মতো অনুভূত হবে।
অবশ্য আগস্টের আকাশে মেঘ জমা থাকা বাংলাদেশের জন্য অচেনা কিছু নয়। যদি সেদিন মেঘ ঢেকে দেয়, হতাশ হবেন না। রাতটিকে ক্যাম্পিং, গল্প বলা, বা আকাশ ফাঁকা হওয়ার অপেক্ষায় তারামেলা দেখার মতো করে কাটাতে পারেন। অনেক সময় এই অনিয়োজিত মুহূর্তগুলোই সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকে।
এই নিবন্ধটি Creative Commons লাইসেন্সের অধীনে বিজ্ঞানবার্তা থেকে থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধটি লিখেছে নুজহাত সুবাহ ঐশী।