জাতীয়

এনবিআর আন্দোলনে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ‘প্রতিবাদ’, ৮কর্মকর্তা বরখাস্ত

এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের অপসারণ দাবির আন্দোলনের মধ্যে জারি করা বদলি আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় আট কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার এনবিআর আট আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ।

সংস্থাটির কর্মকর্তাদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২২ জুন আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে ‘তাৎক্ষণিক বদলি’ করা হয়। একদিন বাদে সংবাদ সম্মেলন করে ওই আদেশকে ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে ‘প্রতিবাদ’ জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বদলির আদেশ ‘অবজ্ঞা’ করে প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায়’ মঙ্গলবার তিনজনকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানিয়েছে এনবিআর। তারা হলেন- খুলনা কর অঞ্চলের উপ কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপ কমিশনার নুশরাত জাহান শমী, কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল। আর তাদের সমর্থন করায় আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- ঢাকা কর অঞ্চল-২–এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫–এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা এবং কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান।

গত মে মাসে এনবিআর দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। সেই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতিসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তাদের আন্দোলনের মধ্যে সরকার পিছু হটে। ২২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে। আর সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই চলবে এনবিআরের সব কাজ।এর মধ্যে সংস্থাটির কর্মীরা নানা অভিযোগ তুলে এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে নতুন করে আন্দোলনে নামেন এবং সংস্থার কার্যালয়ে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করেন।

দাবি আদায়ে ২৮ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন এনবিআর কর্মীরা। তাদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে পড়ে আমদানি-রপ্তানিসহ এনবিআরের কার্যক্রম। পরের দিনও কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে সংস্থাটির সেবাকে ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।

সংকট নিরসনে সেদিন এনবিআর কর্মীদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফেরা এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়। পরে সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার।

পরে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়।

এরপর আন্দোলনের সামনের সারির নেতাদের ‘দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানে’ নামে দুদক। তিন দফায় ১৬ জনের তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় সংস্থাটি।

আন্দোলন থামার পর এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। শুল্কের এক কমিশনারকে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত; আর একের পর এক কর্মকর্তা বদলির মুখে পড়ছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।