সারাদেশ

নিমগাছ বেয়ে পড়ছে মিষ্টি রস, রোগবালাই মুক্তির আশায় ভিড়

ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়নের গড়াইপাড়া গ্রামে। মৃত মো. কালুর ছেলে নাসির আলীর বাড়ির গলিতে থাকা নিমগাছ থেকে পড়ছে খেজুরের রসের মতো মিষ্টি রস। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তির আশায় এই গাছ থেকে রস সংগ্রহে হিড়িক পড়েছে গ্রামবাসীর।

স্থানীয়রা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে গাছ থেকে অল্প অল্প রস বের হলেও তিন দিন আগে থেকে এর পরিমাণ বেড়েছে। গ্রামের এক ব্যক্তি মুখে নিয়ে নিমগাছের রসের মিষ্টতা পান। এ খবর ছড়িয়ে যায় পুরো গ্রামে। এরপর থেকেই গাছ দেখতে ছুটে আসছে উৎসুক জনতা। নিমগাছের পাতা, কাঁচা ফল, বীজ, কাণ্ড ও রস স্বাভাবিকভাবে তিতা হলেও এই গাছের রস মিষ্টি হওয়ায় অবাক গ্রামবাসী ও পথচারী।

স্থানীয়রা আরো জানায়, ‘দুই সপ্তাহ থেকেই হঠাৎ করেই গাছটি দিয়ে ফেনাযুক্ত রস বের হতে দেখা যায়। কিন্তু গত তিনদিন ধরে এর পরিমাণ বেড়েছে। কেউ একজন মুখে মিষ্টি বলার পর সবাই এসে মুখে নিয়ে বিশ্বাস করছে। কেউ কেউ আবার দূর দূরান্ত থেকে নিমগাছের এমন অদ্ভুত কার্যক্রম দেখতে সরেজমিনে আসছেন। কেউ কেউ এসে ছবিও তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন।’

বৃদ্ধ কালু (৭৫) মিয়া বলেন, ‘আমার ৭৫ বছরের জীবনে কখনো এমন ব্যাপার দেখি নাই। আমরা জানি, নিমগাছের পাকা ফল পাকলে মিঠা লাগে। কিন্তু শুনলাম গত কয়েকদিন থেকে আমাদের গ্রামের একটি নিমগাছ থেকে মিষ্টি রস বের হচ্ছে। আমি নিজেও খেয়ে দেখেছি। খাইতে খেজুরের রসের মতই লাগে।’

কলেজছাত্র নোমান বলেন, ‘শুধু স্বাদই নয়, নিমগাছটি থেকে বের হওয়া রসের গন্ধও খেজুরের রসের মতো। খেলে রোগবালাই ভালো হবে এই বিশ্বাস করে অনেকেই গাছের বিভিন্ন স্থানে বোতল লাগিয়ে রেখেছে রস সংগ্রহের জন্য। এমনকি রস বের হওয়ার ধরনটিও খেজুরের গাছের মতোই ফোঁটা ফোঁটা করে পড়ছে। তবে দিনের থেকে রাতে বেশি পরিমাণে রস বের হচ্ছে। এছাড়াও এতো বেশি রস প্রবাহিত হচ্ছে যে গাছের গোঁড়া ভিজে থাকছে সবসময়ই।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন আগে মৃত বাবা-মায়ের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় ২৪ বছরের নিমগাছটি গড়াইপাড়া জামে মসজিদের নামে দান করেছেন গাছের মালিক নাসির আলী।

সংবাদ কর্মীদের তিনি বলেন, ‘গাছটি দান করা হয়েছে। তবে এর আগে থেকেই রস বের হচ্ছে। এমনকি মসজিদ কমিটিও গাছটি বিক্রি করেছে। কখন কাটা হবে তা জানা নেই। এরমধ্যেই গাছ থেকে রস বের হওয়ার পরিমাণ বেড়েছে এবং তা সংগ্রহ করার হিড়িক পড়েছে।’

বড়াইপাড়া জামে মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. মহসীন আলী সংবাদ কর্মীদের বলেন, ‘গাছটি দান পাওয়ার পর মসজিদ কমিটি ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ক্রেতা ২ হাজার টাকাও দিয়েছে। গাছ যেদিন কাটবে, সেদিন বাকি টাকাও পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এরমধ্যেই গাছ নিয়ে হুলস্থূল কাণ্ড পড়ে গেছে। রস সংগ্রহ করতে গাছের যেকোনো অংশে বোতল লাগাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।’

নিমগাছটির রসের স্বাদ খেজুরের রসের মতো হলেও এর আশপাশে মেহগনি ছাড়া আর কোনো গাছ নেই। গাছের নিচে থাকা মাটির গুণাগুণ ও আশপাশের বিভিন্ন পরিবেশের কারণে নিমগাছের রসের স্বাদে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করেন উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষকরা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।