‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২’ অনুসারে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তপশিল ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’। নির্বাচন শেষে নির্বাচনের ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশ পর্যন্ত এই ‘নির্বাচন-পূর্ব সময়’ বহাল থাকবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদে অনুসারে, নির্বাচন কমিশন যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো দায়িত্ব পালনে বা সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দিতে পারবে।
৪৪(ঙ) অনুচ্ছেদ অনুসারে, নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং তাদের অধস্তন কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া বদলি করা যাবে না। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন বোধে যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলির ব্যবস্থা নিতে পারবে। ‘নির্বাচন কমিশন এ সময় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১’ প্রয়োগ করতে পারবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তপশিল ঘোষণার পর থেকে ‘সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়েছে। ১৫ নভেম্বর রাত থেকে নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত এ বিধিমালা কার্যকর থাকবে। এ সময়ে ওই বিধিমালা অনুযায়ী সভা-সমাবেশ, প্রচার, কোনো প্রতিষ্ঠানে চাঁদা ও অনুদান দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আচরণবিধিমালা লঙ্ঘনে জড়িত ব্যক্তির ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দল এ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের মাধ্যমে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আবদুল আলীম বলেন, তপশিল ঘোষণার পর আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন চাইলে প্রশাসনের মধ্যেও রদবদল আনতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে , নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বদলি করার প্রয়োজন হলে নির্বাচন কমিশন লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব সে বদলি কার্যকর করতে হবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যদি সরকার কাজ না করে, তাহলে আইনের বরখেলাপ হবে।
প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা ইসির একটি বড় ক্ষমতা। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘন করেন, সে ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা আছে, একজন রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে দায়িত্ব দেবে, তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে বাধ্য থাকবেন। রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ও বাতিল করা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।